কুরআনের ভাষায় মানবহত্যার ভয়াবহতা-১
১৩ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০৩ এএম | আপডেট: ১৩ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০৩ এএম
যে যতো দুনিয়ামুখী হয়, শয়তান তাকে ততো সহজে অন্যায়-অপরাধ ও পাপাচারে লিপ্ত করে ফেলতে পারে। কেউ কেউ জাগতিক পদ-পদবী ও ক্ষমতা আঁকড়ে থাকার জন্য মানুষের ওপর অবিচার, জুলুম, শোষণ, নিপীড়নের পথ বেছে নেয়। আফসোসের বিষয় হলো, কিছু কিছু মুসলিমের মাঝেও এ ন্যক্কারজনক চরিত্র ব্যাপক হয়ে উঠছে। মুসলিম হয়ে অপর মুসলিমকে হত্যা করা, রক্তপাত, খুন-খারাবীর মতো ভয়াবহ অপরাধ ঘটাতে তারা সামান্যতম দ্বিধা করে না।
গত জুলাই-আগস্টে (২০২৪) ঘটে যাওয়া ভয়াবহতম নারকীয় হত্যাযজ্ঞ এর একটি ঘৃণ্য উদাহরণ। তখনকার ফ্যাসিবাদী শাসকগোষ্ঠীর হিংস্রতা থেকে নিরীহ নিরস্ত্র ছাত্র-জনতা, নিষ্পাপ শিশুসহ রক্ষা পায়নি কেউই। তারা শত শত তাজা প্রাণ নির্মমভাবে হত্যা করেছে। আহত করেছে অজস্র মানুষকে। অথচ অন্যায়ভাবে কোনো মুসলমানকে আঘাত করা, রক্তপাত ও খুন-খারাবী করা ইসলামে ভয়াবহ রকমের অপরাধ ও গুনাহ।
বনী আদমের কী মূল্য এবং কী তার মর্যাদা তা আল্লাহ তাআলা কুরআন কারীমে এভাবে ইরশাদ করেছেনÑ ‘আমি আদম সন্তানকে মর্যাদা দান করেছি এবং স্থলে ও জলে তাদের জন্য বাহনের ব্যবস্থা করেছি, তাদেরকে উত্তম রিযিক দান করেছি এবং আমার বহু মাখলুকের ওপর তাদেরকে শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছি।’ (সূরা বনী ইসরাঈল : ৭০) প্রতিটি আদম সন্তানের মর্যাদা ও তার প্রাণের মূল্য, সামাজিক বিচারে তার অবস্থান যাই হোক না কেন আল্লাহর নিকট অপরিসীম। এজন্য তিনি অন্যায় রক্তপাত ও নরহত্যাকে ভয়াবহ অপরাধ সাব্যস্ত করেছেন।
ইসলামে যেসব অপরাধের সাজা মৃত্যুদণ্ড, সেসব অপরাধ সাব্যস্ত হওয়া ছাড়া কোনো ব্যক্তিকে হত্যা করা সম্পূর্ণ হারাম। একজন ব্যক্তি কখন এবং কী কারণে হত্যার উপযুক্ত হয়Ñ এ সম্পর্কে সুস্পষ্ট বিবরণ রয়েছে কুরআন-সুন্নাহ্য়। ইসলামী ফিকহ শাস্ত্রে রয়েছে এর বিশদ আলোচনা ও বিশ্লেষণ। আল্লাহর বিধানের বাইরে গিয়ে অন্যায়ভাবে কাউকে হত্যা করার বিন্দুমাত্র অধিকার কারো নেই।
মৃত্যুদণ্ডের অপরাধ ছাড়া একজন ব্যক্তিকে হত্যা করা সম্পর্কে কুরআন কারীমে রয়েছে কঠিন সাবধানবাণী! শক্তি ও ক্ষমতার দাপটে কোনো পাপিষ্ঠ হত্যাকাণ্ডের মতো অপরাধ করলে সে দুনিয়াতেও লাঞ্ছনার শিকার হবে আর আখেরাতে তার জন্য রয়েছে জাহান্নামের ভয়াবহ শাস্তি।
কোনো মুমিন ইচ্ছাকৃতভাবে কাউকে হত্যা করতেই পারে না। পার্থিব জীবনে মানুষ জেনে না জেনে নানা অপরাধ ও পাপকর্ম করে বসে। এমনকি কবীরা গুনাহ পর্যন্ত করে বসে। কিন্তু শত অপরাধের মাঝেও কিছু কিছু অপরাধ এতোটাই জঘন্য ও ভয়াবহ যে, কোনো মুমিন থেকে তা ঘটাই অবিশ্বাস্য। অন্যায়ভাবে মানবহত্যা তেমনই একটি অপরাধ। কোনো মুমিন থেকে ইচ্ছাকৃতভাবে তা ঘটতেই পারে না।
আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন- ‘এটা কোনো মুমিনের কাজ হতে পারে না যে, সে (ইচ্ছাকৃত) কোনো মুমিনকে হত্যা করবে। ভুলবশত এরূপ হয়ে গেলে সেটা ভিন্ন কথা।’ (সূরা নিসা : ৯২) উক্ত আয়াত থেকে এটা স্পষ্ট যে, কোনো মুমিন ইচ্ছাকৃত অপর মুমিনের প্রাণহানী করতে পারে না। ভুলবশত কখনো এ দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। যেমন কোনো শিকারকে লক্ষ্য করে তির ছুড়ল, কিন্তু নিশানা ভুল করে কোনো ব্যক্তির গায়ে তা আঘাত হানল। তবে এ ধরনের অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা যে একেবারেই বিরল তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
কিন্তু বাস্তবতা হলো, মুসলিম সমাজে এখন ইচ্ছাকৃত হত্যাকাণ্ডের মতো জঘন্য পাপকর্মটি হরহামেশাই ঘটছে, তাও তুচ্ছ ও অতি নগণ্য কারণে। অথচ আল্লাহ তাআলা কুরআন কারীমে অন্যায় রক্তপাত ও হত্যাকাণ্ডকে ভয়াবহ গুনাহ বলেছেন।
অন্যায় হত্যাকাণ্ড হারাম ও কুফরতুল্য গুনাহ। কুরআন কারীমে অন্যায় হত্যাকাণ্ডকে সুস্পষ্ট হারাম ঘোষণা করা হয়েছে। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন- ‘আর তোমরা সেই প্রাণকে হত্যা করো না, যার হত্যা আল্লাহ হারাম করেছেন, তবে (শরীয়ত অনুযায়ী) তোমরা তার অধিকার লাভ করলে ভিন্ন বিষয়।’ (সূরা বনী ইসরাঈল : ৩৩)
সূরা ফুরকান-এ আল্লাহর সঙ্গে শিরকের নিষেধাজ্ঞার পরই অন্যায়ভাবে হত্যাকে নিষেধ করা হয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন- ‘এবং (আল্লাহর প্রিয় বান্দাগণ হলো,) যারা আল্লাহর সঙ্গে অন্য কোনো মাবুদের ইবাদত করে না এবং আল্লাহ যে প্রাণকে (হত্যা করা) হারাম করেছেন, তাকে অন্যায়ভাবে হত্যা করে না এবং তারা ব্যভিচার করে না। আর যে ব্যক্তিই এরূপ (অপরাধ) করবে, তাকে তার গুনাহের (শাস্তির) সম্মুখীন হতে হবে। কিয়ামতের দিন তার শাস্তি বৃদ্ধি করে দ্বিগুণ করা হবে এবং সে লাঞ্ছিত অবস্থায় তাতে সদা-সর্বদা থাকবে।’ (সূরা ফুরকান : ৬৮-৬৯)
উল্লিখিত আয়াতদ্বয়ে হত্যাকাণ্ডকে সুস্পষ্ট হারাম বলা হয়েছে। আর এর শাস্তি যে কত ভয়াবহ তাও স্পষ্টভাবে উল্লেখ হয়েছে। রাসূলুল্লাহ (সা.) কোনো মুসলিমের সাথে লড়াইয়ে লিপ্ত হওয়াকে কুফর আখ্যা দিয়ে ইরশাদ করেছেন- ‘মুসলমানকে গালি দেয়া পাপাচার, আর তার সাথে লড়াইয়ে লিপ্ত হওয়া কুফর।’ (সহীহ বুখারী : ৪৮) এক মুসলিমের সাথে শুধু লড়াই বা বিবাদে লিপ্ত হওয়াই যদি কুফর হয়, তাহলে তাকে হত্যা করা যে কত কঠিন গুনাহের কাজ তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
বিভাগ : শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
জকিগঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনায় দুই মোটরসাইকেল আরোহী গুরুতর আহত
ঝিনাইদহে পুকুর থেকে মাদ্রাসা ছাত্রের লাশ উদ্ধার, জড়িত সন্দেহে আটক-১
চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলামের কাছে ক্ষমা না চাইলে ভিপি নুরের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা
বগুড়ায় মেয়েকে হত্যা করে মায়ের আত্মহত্যা, চিরকুট উদ্ধার
বিবাহ বিভ্রাটে তৌহিদ আফ্রিদি, স্যোশ্যাল মিডিয়ায় শালিকা নিয়েছে বউয়ের অবস্থান
বিদেশি হস্তক্ষেপে বিগত সরকার ফ্যাসিস্টে পরিণত হয়েছিলো : আসিফ নজরুল
মাদক নির্মূলে কঠোর অবস্থানের ঘোষনা স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার
নারায়ণ চন্দ্রকে আদালত চত্বরে ডিম নিক্ষেপ
সেই কবি এবার ৬৯ বছর বয়সে এইচএসসি পাস করলেন
ফিলিপাইনে টাইফুন উসাগির আঘাত
যশোরে ছুরিকাঘাত করে নগদ টাকা ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনায় মামলা
চুয়াডাঙ্গার চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট হলেন যশোরের বিচারক শিমুল
জুলাই-আগষ্ট বিপ্লবে ছাত্র-জনতার অন্যতম লক্ষ্য ছিল একটি বৈষম্যহীন সমাজ গঠন : ভূমি উপদেষ্টা
২০ হাজার ওমরাযাত্রী অনিশ্চয়তায়, ওমরাহ টিকিটে এক লাফেই ১৭ হাজার টাকা বৃদ্ধি
সংষ্কার কাজ দ্রুত শেষ করে নির্বাচনের ব্যবস্থা করুন -মুফতী সৈয়দ ফয়জুল করীম
কটিয়াদীতে যুবকের লাশ উদ্ধার, স্ত্রী আটক
বেনাপোল বন্দরে কার্গো ভেহিকেল টার্মিনাল উদ্বোধন করলেন নৌপরিবহন উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেন, কমবে ভোগান্তি, বাড়বে বাণিজ্য
যশোর বোর্ডে এইচএসসিতে পুনর্নিরীক্ষণের আবেদন ৬৬ হাজার, পরিবর্তন ৭১ জনের
আইএইচএফ ট্রফির বাছাইপর্বে অংশ নিবে ইয়ুথ ও জুনিয়র হ্যান্ডবল দল
ফের কমলো সোনার দাম